সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে চান কক্সবাজারের নফু মাঝি

সমকাল ◑

মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি ভুলে থাকতে চান কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনকারী আরডিসি নাজিম উদ্দিনের হাতে নির্যাতনের দুঃসহ সেই স্মৃতি। ৬২ বছরের এই বৃদ্ধ জানালেন, দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনও তাকে তাড়া করে।

২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার নফু মাঝিকে কানে ধরে টেনে-হেঁচড়ে এবং মারধর করেছিলেন (সিনিয়র সহকারী কমিশনার) আরডিসি নাজিম উদ্দিন। নির্যাতনের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।

সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় নফু মাঝির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নির্মম সেই ঘটনার কথা আর মনে করতে চান না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, নাজিম উদ্দিন ২০১৭ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন নাজিম উদ্দিন। কারণে-অকারণে সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করা ছিল তার স্বভাব। ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় এই কর্মকর্তাকে। এই বদলী আদেশের কয়েকদিন আগে নফু মাঝিকে কানে ধরে টেনা-হেঁচড়া এবং মারধর করেছিলেন নাজিম উদ্দিন।

বিতর্কিত এই কর্মকর্তা সর্বশেষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা এবং তাকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছেন।

কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলস এর প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ বলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন দুর্নীতিবাজ একজন কর্মকর্তা। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। সে সময়ে আমি হাজির হলেও নাজিম হাজির হননি। পরে তাকে শাস্তিমূলকভাবে রাঙ্গামাটির লংগদুতে বদলি করা হয়।

রাশেদুল মজিদ অভিযোগ করেন,  কক্সবাজারের সাবেক এই এসিল্যান্ড দায়িত্ব পালন করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নানাভাবে অপকর্ম করে গেছেন। খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আশ্বাসে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষদের নানাভাবে নাজেহাল করতেন।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মধ্যরাতে রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যদের একটি দল শহরের চড়ুয়াপাড়ায় বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাড়িতে হানা দেয়। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, এরপর মারধর করতে করতে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দেন ডিসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। এরপর মাদকবিরোধী অভিযানে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে আরিফুলকে কারাগারে পাঠান ভ্রাম্যমাণ আদালত।